সমাজতন্ত্র বলতে আমি বুঝি যেখানে সবার সমান অধিকার- জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে। আর ধর্ম সেটাই যা শেখায় পরমত সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা। এই সংজ্ঞায় তন্ত্র আর ধর্মকে আমি এক কাতারে দেখি।তবে কেনো আমাদের অঞ্চলে সমাজতন্ত্রের এই দুরাবস্থা? আসলে আমাদের অঞ্চলে সমাজতন্ত্রের একটা স্বকীয় রূপ দরকার ছিলো। কিন্তু তার পরিবর্তে আমাদের তন্ত্রীরা ছিলো সোভিয়েত আর চীনপন্থী। যার প্রভাব মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ছিলো। এমনও শোনা যায়, এদেশীয় কম্যুনিস্টরা দুদিকেই গুলি ছুঁড়েছে।
হিযবুত তাহরীর এর ওয়েব-পেইজে দেখা যায়,ওরা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।আর তাদের সদস্যরা হবে মুসলিম।তাহলে সেই পরিবর্তিত পৃথিবীতে অমুসলিমদের অবস্থান কি হবে? তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক?কেননা কনভার্টেট মুসলিমরা আছে না দ্বিতীয় কাতারে? এরা আসলে সাম্রাজ্যবাদী বলতে বোঝে ইসরাইলের এয়াহুদী আর পুঁজিবাদী বলতে কেরেস্তান এর আমেরিকা। একটা ধর্মভিত্তিক দেশ/পৃথিবী গড়ে তোলার পুরানো নগ্ন খেলা-ই এদের উদ্দেশ্য।
কাজেই হিযবুত তাহরীর আর সমাজতন্ত্রী- এদের দুজনের আক্রমণের বিষয়বস্তু এক হলেও পরিত্রাণ এর উপায়টা ভিন্ন। হিযবুত মুলতঃ সমাধানটাকে সামনে রেখে সমস্যাকে চিনহিত করেছে। শুধুমাত্র তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ এর জন্যই বেছে নিয়েছে গাল ভরা বুলি “পুঁজিবাদ,সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক”।
বাকি থাকলো গণতন্ত্র-গণের তন্ত্র। যে ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষ- নারী,পুরুষ,ধর্ম,বর্ণ,আচার নির্বিশেষে তার অধিকার ভোগ করার স্বাধীনতা পাবে। যেখানে সে তার বাক,পোশাক সবকিছুর স্বাধীনতা পাবে। সে দাঁড়ি,টুপি,পৈতে,টিকি,হিযাব,নিকাব,ধুতি,পাঞ্জাবি যা-ই পরুক রাষ্ট্রের তাতে বারণ করার অবকাশ নাই। একজন ব্যক্তি চাইলে পোশাক না ও পরতে পারে যদি তার আঞ্চলিক সংস্কৃতি তাতে বাধা না দেয়। কিন্তু একজনকে নিয়ে তো আর রাষ্ট্র নয়,কাজেই রাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যক্তিটিও অধিকার রাখে প্রথমজনের সমপরিমাণ। আমার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে যদি তোমার অধিকার ক্ষুণ্ণ করি,তবে তা গণতন্ত্র নয়।কাজেই নিজের অধিকারের পাশাপাশি অন্যের অধিকারের ব্যাপারটিও গণকে মাথায় রাখতে হয়।
এতো কিছু কেনো লিখছি? ইদানীং খুব দেখি,একটা পরাশ্রয়ী বাংলা সংস্কৃতি গড়ে তোলার খুব চেষ্টা করছেন কিছু কিছু জ্ঞানী,সংস্কৃত ব্যক্তি যাদেরকে তাহরীর এর জ্ঞান ভান্ড ও বলা চলে। ঢালাওভাবে বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি বলে সঙ্গায়িত করা এদের একটা পুরানো বদভ্যেস।এদের তরে শুধু এতটুকুই যোগ করি-আমাদের মতো পলায়নপর মধ্যবিত্ত যা-ই বলুক আর করুক না কেনো বাঙ্গালি অগ্রহায়ণেই ধান কাটবে,শাওয়ালেই চাঁদ দেখবে,আশ্বিনেই পুজার ঢোল পিটাবে আর বৈশাখেই মেলায় যাবে। আমরা সামারের ভ্যাকেশন এর অপেক্ষায় থাকলেও বাংগালি জৈষ্ঠ্যের রোদে পুড়ে রাজশাহীর আমের সুখ নেবে। আসলে যা কিছু আমাদের নিজস্ব,আমাদের ভূমিজ সেইসব কিছু নিয়েই আমাদের বাঁচার চেষ্টা করা উচিত। না মার্কিনী, না রুশীয়,না চৈনিক,না ভারতীয়, না আরবীয়,না পাকি- আমরা হবো বাঙ্গালি,বাংলাদেশী বাংগালি।