রবিবার, ৬ জুন, ২০১০

হলুদ খাম

প্রিয় নিলয়,
কেমন আছিস? তোকে হঠাৎ আজ চিঠি লিখতে বসলাম, যদিও এর পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কারণ নেই, তারপর ও বেশ ক’দিন অস্থির হয়ে ভাবছি, কী লিখবো? একদিন তুই facebook এ স্ট্যাটাস দিলিঃ “Kono purono bondhu jodi dak joge ekta chithi likhe pathato.... (কোনো পুরোনো বন্ধু যদি ডাক যোগে একটা চিঠি লিখে পাঠাতো!)”- সে অর্থে আমি তোর বন্ধু নই, ঢাবি’তে পড়াকালীন ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই মাত্র। তারপরও কী যে হলো, তোকে কমেন্ট দিলামঃ “ওক্কে, তোর ঠিকানা দে”। প্রতুত্তরে জিজ্ঞেস করলি চিঠি লেখার অনুভূতি মনে আছে কি না। ধা করে যেনো পিছিয়ে দিলি বছর সাতেক আগের দিনগুলিতে, যখন তোর মত একদিন আমিও হল এ থাকতাম, দরজার কড়া নেড়ে নীচ দিয়ে হলুদ খাম ঢুকিয়ে দিতো অধরদা। প্রিয় বন্ধুদের চিঠি আসতো চট্টগ্রাম থেকে, সিলেট থেকে অথবা ঢাকার অন্য প্রান্ত থেকে। কখনো বা অস্ট্রেলিয়া থেকে সাদা খামে বিমানে চড়ে আসতো কলেজের প্রিয় স্যার এর চিঠি । এক চিঠি কত্তোবার যে পড়তাম! পড়া শেষে টেবিলের ভাঙ্গা ডেস্কে সযত্নে ভাঁজ করে ঢুকিয়ে রাখতাম। জুনের বা ডিসেম্বরের ছুটিতে বাড়ি গেলে পলিথিন ব্যাগে বেঁধে বহুদিনের গোপন কুঠুরিতে রেখে আসতাম।
তারপর এক সময় পাশের বাড়ির মতো পাশের হল থেকে চিঠি আসা শুরু হলো। এবার আর অধরদা নয়, নিজ হাতে বয়ে আনতাম নিজের চিঠি। হলে ফিরতে ফিরতে হয়তো বুক পকেটে রাখা সে চিঠি ঘামে ভিজে একসা। তারপর রাত গভীরে বেডমেট ঘুমিয়ে পড়লে টেবিল ল্যাম্প এর ঘাড় বাঁকা করে সে চিঠি পড়া। তখনকার প্রিয় চন্দ্রবিন্দু’র গান ভিনদেশি তারা’র মতো সে ছিল আমার রাত জাগা পাখি। আমার সেই বিচ্ছিরি তারাকে হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেয়া... মন খারাপের রাতে চোখে ঘুম হয়ে আসার কথা লিখে পরদিন হাতে চিঠির উত্তর গুঁজে দেয়া...হাহ! সে এখন সত্যিই অন্য কারো বুকে মুখ লুকিয়ে গল্প শোনে ।
ধুর! এসব কী লেখা শুরু করলাম! তোর কোন খবরই নিলাম না, বসে গেলাম স্মৃতির কাসুন্দি ঘাটতে। তারপর বল, তোদের দিন কাটছে কেমন? এখনো আগের মত বাস্কেটবল আর লাল পতাকা নিয়েই আছিস! পড়াশোনাটাও ঠিক রাখিস।  জানিস, এখনো মাঝে মাঝে মনে হয়, যাই পোষ্ট বক্সটা দেখে আসি, যদি কোনো চিঠি আসে! নাহ।বক্স ভর্তি শুধু free আর gratis এর বিজ্ঞাপন। গতবার বাড়ি গিয়ে সেই গোপন কুঠুরিটা খুলতে হলো, বাসা বদলাতে হবে, বাবার retirement. পুরোনো টেবিল চলে যাবে অন্য আত্মীয়ের বাসায়। আমার সেই পলিথিনের ব্যাগটা তেমনি আছে, প্রিয় বন্ধু আর স্যারের চিঠিগুলো বুকে চেপে। কিন্তু শত চেপে রেখেও উইপোকার কাছ থেকে বাঁচাতে পারেনি। আমিও যেমন পারিনি বাঁচাতে মোবাইলের হাত থেকে চিঠি লেখার অনুভূতিগুলোকে। অনবরত কথা বলতে বলতে এখন কথা বলার সুখটাও হারিয়ে গেছে।মাঝে মাঝে তাই facebook এ টুকরো চিঠি-রূপ স্ট্যাটাস লিখি। outlook, gmail, yahoo তে ঢুঁ মারি, ডাক-পিয়ন হয়ে একটা চিঠি যদি কেউ পৌঁছে দিতো!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন